চুয়াডাঙ্গা বৃহস্পতিবার , ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

  • বিনোদন
  • ৯:৪৪ অপরাহ্ণ | জুলাই ১৩, ২০২০
  • নিজস্ব সংবাদদাতা
    চুয়াডাঙ্গা ইনফো ডটকম
  • 80 Views

অবশেষে গ্রেপ্তার সাবরিনা, সাহেদ কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা সনদ জালিয়াতির অভিযোগে কথিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেকেজি হেলথ কেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা এ চৌধুরীকে রবিবার দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়ার পর ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী ওরফে ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ ওঠার পর পলাতক প্রতারক রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। করোনার ভুয়া সনদ দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাহেদের দুটি হাসপাতালে অভিযান, সিলগালা ও বন্ধ করার পর মঙ্গলবার সাহেদসহ রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের ১৭ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র‌্যাব। ওই মামলায় প্রথমে ৭ জন ও পরে সাহেদের অপর সহযোগী তারেক শিবলীকে গ্রেপ্তার করা করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সাত দিন পেরিয়ে গেলেও সাহেদকে ‘খুঁজে পায়নি’ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম বলেন, ‘আশা করছি শিগগিরই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব। তিনি কোথাও পালাতে পারবেন না। আমরা তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি।’

সাহেদকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। না হলে গ্রেপ্তার করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাহেদ কোথায় সেটা সাহেদ জানে। তারও উচিত আত্মসমর্পণ করা। সাহেদকে র‌্যাব-পুলিশ খুঁজছে। আশা করি, খুব শিগগির তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি আপনাদের জানাতে পারব। সাহেদ কী ধরনের অন্যায় করেছেন, সেগুলো ইনকোয়ারি হচ্ছে। রিপোর্ট এলে আপনাদের জানাতে পারব। তার অন্যায়ের গভীরতাটা কতটুকু।’

উত্তরা থানা সব সময় সাহেদকে রক্ষা করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা আপনারা আমলে নিচ্ছেন কি না–এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়টি উদঘাটনের পর কেউ তাকে শেল্টার দেয়নি। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তার অপরাধ বের করেছে। সে কী করেছে, সেগুলো র‌্যাব ও পুলিশ তদন্ত করছে। তাকে অবশ্যই আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

 

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তার (সাহেদ) দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে, বর্ডার যাতে ক্রস করতে না পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা খুঁজছি। আশা করি, শিগগির তাকে ধরতে সক্ষম হব।’

সাহেদ গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইজিপি বেনজীর আহমেদ  সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সাহেদ গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চলবে।’

সাহেদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম  বলেন, ‘সাহেদ কিছুতেই দেশ ছেড়ে পালাতে পারবেন না। সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে ধরতে একাধিক টিম মাঠে আছে। সাহেদ এত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন যে চাইলেও পালাতে পারবেন না। সাধারণ মানুষই তাকে ধরে ফেলতে পারবে। তার পক্ষে বেশি দিন ‘আত্মগোপন’ করে থাকা সম্ভব নয়। তবে পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাহেদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযানের পরপরই তাকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনী। সাহেদ তাদের নজরদারিতেই আছেন; কোনোভাবেই পালাতে পারবেন না তিনি। তবে সাহেদ আটক আছেন কি না, সে বিষয়ে গতকাল সোমবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশের কোনো কর্মকর্তা নিশ্চিত করেননি।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ জেকেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, করোনা সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তেজগাঁও থানায় করা মামলাগুলোয় (চার মামলা) তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে ডা: সাবরিনাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তেজগাঁও থানা পুলিশ।

সাবরিনাকে গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে জালিয়াতির অভিযোগে জেকেজির যেসব সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সবাই বলেছেন ডা. সাবরিনাই জেকেজির চেয়ারম্যান। তা ছাড়া তেজগাঁও কলেজে জেকেজির বুথে হামলার অভিযোগ উঠলে সাবরিনাই প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হিসেবে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন। অভিযানের এক দিন আগে তিনি নিজে প্রতিষ্ঠান থেকে সরে যান। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কখনোই কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সাবরিনা তার দায় এড়াতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন হারুন অর রশীদ। এত দিন পর গ্রেপ্তার করা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

একাধিক গণমাধ্যমের কাছে ডা. সাবরিনা বলেছেন, তিনি করোনা পরীক্ষায় জেকেজির প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আগেই জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া জেকেজির চেয়ারম্যান নন বলেও দাবি করেছেন তিনি। অথচ করোনা পরীক্ষায় জেকেজির প্রতারণার খবর প্রকাশ হওয়ার আগে তিনি নিজেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতেও তাকে জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবরিনা বলেন, সেটা তার ভুল ছিল।

 

এদিকে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে ডা: সাবরিনা নিজেকে  নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘জেকেজির চেয়ারম্যান হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না; বরং এটা ওভাল কোম্পানির একটি অঙ্গসংগঠন। ওভাল গ্রুপ ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। যার মালিক হচ্ছেন আরিফুর রহমান। তা ছাড়া আরিফের সঙ্গে আমার এখন কোনো সম্পর্ক নেই।’

উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন করোনার মনগড়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে তেজগাঁও থানা পুলিশ আরিফসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযান তদারকি করেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ। গ্রেপ্তারের পর থানা-হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুরের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকেও। এ ছাড়া রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজে নমুনা সংগ্রহের বুথ বসিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণের নামে শুরু করেন অবৈধ কর্মকাণ্ড। তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের ওপরও হামলা করে আরিফের ক্যাডার বাহিনী। এ ছাড়া জেকেজির চাকরিচ্যুত কর্মী ও নার্স তানজিনা পাটোয়ারী ও তার স্বামী হুমায়ুন কবীর করোনার ভুয়া সনদের ব্যবসা করেন। পুলিশ অন্তত ১২ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে হুমায়ুন কবীর ও তানজিনাকে গ্রেপ্তার করে। মূলত তাদের অনুসন্ধান করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে আরিফুরের নানা অপকর্মের কাহিনী। সাহেদের মতো আরিফও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জনকে হুমকি দিতেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আরিফ।

আপনার মতামত লিখুন:

:

আক্রান্ত

সুস্থ

মৃত্যু

  • জেলা সমূহের তথ্য
ন্যাশনাল কল সেন্টার ৩৩৩ | স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ | আইইডিসিআর ১০৬৫৫ | বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন ০৯৬১১৬৭৭৭৭৭ | সূত্র - আইইডিসিআর | স্পন্সর - একতা হোস্ট
বিনোদন'র এরকম আরো ইনফো