চুয়াডাঙ্গা মঙ্গলবার , ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভালো নেই ব্যাংকিং খাত!

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা সংক্রমণের মাঝে প্রায় সবকিছুই চালু হয়েছে। সচল রয়েছে দেশের সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সও আসছে আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। গ্রামীণ অর্থনীতিও সচল রয়েছে। এই সংকটের মাঝে খরচ বাড়লেও মানুষ অল্পস্বল্প পরিমাণ সঞ্চয়ও করছে। অর্থাৎ,ব্যাংকে মানুষের টাকা জমা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলে ব্যাংক থেকে ঋণও নিচ্ছেন। তবে সত্যিকার অর্থে ভালো নেই ব্যাংক খাত। ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনীতির বিপদে রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করা এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন কৃত্রিমভাবে ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো দেখানো হচ্ছে।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও কাউকেই খেলাপি করা যাচ্ছে না। আবার করোনাকালে খেলাপি ঋণ আদায়ও বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত ঋণ ও সুদ আদায়ও কমে গেছে। অথচ ব্যাংকের খরচ সেই অর্থে কমানো যাচ্ছে না। কর্মকর্তাদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। অন্যান্য খরচও আগের মতোই করতে হচ্ছে। এর ফলে লাভে থাকা শাখাগুলো লোকসানে রূপ নিচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংকগুলো লাভ বা আয় বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে কোনও প্রভিশন রাখতে হচ্ছে না। এর ফলে ব্যাংকগুলো আয় বাড়িয়ে দেখাতে পারছে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে একেবারেই ভালো নেই ব্যাংক খাত। এখন কৃত্রিমভাবে ভালো দেখানো হচ্ছে।’ এতে ব্যাংক খাতের ওপরে বড় ধরনের বিপদ আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি। ভারতে ইতোমধ্যে দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই ব্যাংক দুটি তার আমানতকারীদের মাত্র ২৫ হাজার টাকা করে ফেরত দিতে পারছে।’ ভারতের এই ঘটনায় আমাদের সর্তক হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়াটা ব্যাংক খাতের জন্য বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত। এই করোনার মধ্যেও প্রভিশনের বিধানটা রাখা উচিত ছিল, এতে ব্যাংকগুলো ভালো থাকতো। কারণ, টাকা ফেরত না দিলে খেলাপি করার বিধান যখন কার্যকর হবে, তখন ব্যাংকগুলোকে অনেক প্রভিশন করতে হবে। তখনকার চাপ সামাল দেওয়াটা কঠিন হবে ‘ এ জন্য এখনই প্রভিশন রাখার বিধান চালু হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

অবশ্য অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত মনে করেন, ব্যাংকগুলোতে লোকসানি শাখা এখন বাড়লেও নতুন বছরে গিয়ে কমে আসবে। তিনি বলেন, ‘ঋণের টাকা ও সুদের টাকা আদায় করা না গেলেও এই মুহূর্তে কোনও অসুবিধা হবে না। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ও দেখাতে সমস্যা হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ঋণ আদায়ের নির্দেশনা দেবে, তখন বোঝা যাবে সমস্যা কেমন। তখন যদি ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা ফেরত না পায়, পরিস্থিতি জটিল হবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, বিতরণ করা ঋণ ফেরত না এলে এবং কোনও ব্যাংকের আমানত কমে গেলে, তখন গ্রাহকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

অবশ্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনেকে বলছেন, করোনাকালে প্রভিশন সুবিধায় ব্যাংকের আয় বাড়িয়ে দেখানোরও একটা খেসারত দেওয়া লাগতে পারে। আর তা হলো, সংকট মাথায় রেখেও সরকারের কোষাগারে সর্বোচ্চ পরিমাণ ট্যাক্স দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনাকালে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় পড়েছে বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এই ব্যাংকটির ৩৮৩ শাখার ২৪৬টি শাখাই (অক্টোবর পর্যন্ত ) লোকসানে পড়েছে। গত জুনে লোকসানি শাখা ছিল ১৯৫টি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৩ জুলাই বন্যা কবলিত এলাকায় কৃষিঋণ আদায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অপরদিকে নির্দেশনায় নতুন ঋণ বিতরণ চালু রাখতে বলা হয়।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দাবি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ঋণ আদায় বন্ধ রাখা ও নতুন ঋণ দেওয়ার কাজ করছে রাকাব। আর এ কারণেই বাড়ছে লোকসান। শুধু বন্যা নয়, করোনাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাকাব। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির আয় ছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে চেয়ে যা ৫৯ কোটি টাকা কম। অথচ ব্যয় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৬ কোটি টাকা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরে সোনালী ব্যাংকের ২৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। যদিও জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি আদায় করেছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ২৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০টি। আর জনতা ব্যাংকের এক হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় করেছে মাত্র আড়াই কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখা ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৯টিতে। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করলেও আদায় করেছে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। এই ব্যাংকটির লোকসানি শাখা বেড়ে হয়েছে ১৮ থেকে ৭৮টি।

রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় করেছে দেড় কোটি টাকা। এই ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ১১ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬টি।

আপনার মতামত লিখুন:

:

[democracy id="3"]
আক্রান্ত

সুস্থ

মৃত্যু

  • জেলা সমূহের তথ্য
ন্যাশনাল কল সেন্টার ৩৩৩ | স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ | আইইডিসিআর ১০৬৫৫ | বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন ০৯৬১১৬৭৭৭৭৭ | সূত্র - আইইডিসিআর | স্পন্সর - একতা হোস্ট
অর্থনীতি'র এরকম আরো ইনফো