চুয়াডাঙ্গায় নদী-খালের মাটি বিক্রি যাচ্ছে ইট ভাটায়, ধোরাছোঁয়ার বাইরে মাটিখেকোরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদী ও খাল থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। জেলার চারটি উপজেলার নদী, খাল ও বিল বেষ্টিত গ্রামেই অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভেকু ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে কাটছে মাটি। নষ্ট করছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। অবৈধভাবে সরকারি জায়গা থেকে মাটি কেটে তা বিক্রি করছে বিভিন্ন ইট ভাটায়। সরকারি জায়গা থেকে মাটি কাটায় ভ‚মিদস্যুদের পকেট ভারী হলেও পাতলা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হলেও পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন নেপথ্যে প্রভাবশালীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন জেলার চারটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমি থেকে মাটি কেটে করছে একটি চক্র। তাদের টার্গেট সরকারি পতিত জমি, খাল বিল ও নদী। এসব জায়গা থেকে দিনের পর দিন মাটি কেটে ইটভাটাতে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এতে করে ওই চক্রের সদস্যরা ফেপেফুলে উঠছেন। মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব মাটিখেকোদের নিয়ে লেখালেখি হলে স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জরিমানাও আদায় করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার সেই তৎপরতা। অনুসন্ধান বলছে, জেলার চারটি উপজেলাতে অন্তত ৩৫জন মাটিখেকো প্রতাবশালী রয়েছেন। যারা সবাই সরকার সর্মথিত দলের সাথে সম্পৃক্ত। আর এ কারণে শুধু জরিমানা দিয়েই রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন তারা। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভেকু মেশিন দিয়ে দামুড়হুদার নতিপোতা ইউনিয়নের বেড়বাড়ি গ্রামের ভৈরব নদীর পাড় কাটছে এলাকার চিহ্নিত দুই ভ‚মিদস্যু। সে মাটি কেটে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করে আসছে তারা। মাটি কাটার ফলে জমি হচ্ছে পাতলা। হারাচ্ছে তার উর্বরতা। সেই সাথে অনেক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি গ্রামের সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাটিবোঝাই ট্রাক্টরগুলো।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ক্ষমতার দাপটে সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এমন অবৈধ কাজ করে যাচ্ছেন তারা। প্রশাসনকে জানানো হলে প্রশাসনের উচ্চ ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে আসলে বন্ধ থাকে মাটি কাটার কাজ। তারা ফিরে গেলে আবারো আগের মতোই শুরু হয় সে কাজ।
গ্রামের ভৈরব নদীর পাড়ের এ মাটি কেটে বিক্রি করার অভিযোগ নতিপোতা ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামের তুহিন ও বেড়বাড়ি গ্রামের ছমিরুলের বিরুদ্ধে।
এ অবস্থায় হেমায়েতপুর বেড়বাড়ি গ্রামের সচেতন মহল দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি অকর্ষন করে মাটি কাটা বন্ধ ও চিহ্নিত ভূমিদস্যুদের শাস্তির দাবী করেছে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ জানান, অবৈধ উপায়ে মাটি কেটে বিক্রয়কারী যেই হোক না কেনো তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দিলারা রহমান বলেছেন, ‘এমন অভিযোগ পেলেই আমরা ঘটনাস্থলে ছুঁটে যায়। সেখানে অভিযোগের সত্যতা পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা প্রদান করা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের খুঁজে পাওয়া যায়না। পরর্তীতে সেসব স্থানগুলোকেও নজরদারীতে রাখা হয়।’
এছাড়া জীবননগর উপজেলার কাটাপোল গ্রামে সরকারি খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার হাসাদাহ্ ইউনিয়নের কাঁটাপোল গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়ার খাল পুনঃখননের জন্য জীবননগর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বাবুল আক্তারের সমিতির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী কাঁটাপোল গ্রামের বিলের মাঠ থেকে সুইসগেট পর্যন্ত ওই খাল ১২ ফুট চওড়া এবং ৪ ফুট গভীর করে খনন এবং খননের মাটি দিয়েই খালের পাড় বেঁধে দেয়ার কথা। কিন্তু চুক্তি নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে ১৫-২০ ফুট চওড়া ও ১০-১২ ফুট গভীর করে খাল খনন করে সেই মাটি অবৈধভাবে ইটভাটায় বিক্রি করে আসছিলেন বাবুল আক্তার।
এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বাবুল আক্তারকে অবশ্য ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে এ অর্থদণ্ড প্রদন করেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন।